1. islammamun1286@gmail.com : admin :
  2. monjurtapon@gmail.com : Tapon Alokito : Monjur Elahi Tapon
  3. tofayelahammad149@gmail.com : tofayel :
যুদ্ধের অজুহাতে গমের মূল্যবৃদ্ধির পাঁয়তারা | বাঙ্গালীর দিগন্ত
মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ০৮:৩৫ পূর্বাহ্ন

যুদ্ধের অজুহাতে গমের মূল্যবৃদ্ধির পাঁয়তারা

রিপোর্টার
  • সময় : বুধবার, ৯ মার্চ, ২০২২
  • ২৫৩ Time View
যুদ্ধের অজুহাতে গমের মূল্যবৃদ্ধির পাঁয়তারা

যুদ্ধরত দেশ রাশিয়া ও ইউক্রেনের সঙ্গে বাংলাদেশের সরকারি পর্যায়ে আমদানির চুক্তির পুরো লট গম চলে এসেছে দেশে। গম আমদানি নিয়ে সরকারি পর্যায়ে শঙ্কা নেই। বেসরকারি পর্যায়ে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২১ লাখ মেট্রিক টন আমদানি হয়েছে।

পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে উৎপাদনের প্রায় ১২ লাখ টন চলতি মাসের শেষে কৃষকের ভান্ডারে যুক্ত হবে। এছাড়া গত মৌসুমে সরকারিভাবে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি অর্জন হয়েছে। কিন্তু এরপরও যুদ্ধের ডামাডোলের অজুহাতে বাজারে কতিপয় ব্যবসায়ী বাড়াচ্ছে গমের দাম। এতে গম ও মোটা চালের মূল্য প্রায় কাছাকাছি হয়ে গেছে। বাজারে এক কেজি মোটা চাল ৫০ টাকা এবং আটার কেজি ৪৫ টাকায় উঠেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

সূত্র জানায়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গম আমদানিকারক এবং গম থেকে আটা ও ময়দা উৎপাদনকারীদের ওপর নজরদারি করছে সরকারের এজেন্সিগুলো। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সম্প্রতি দ্রব্যমূল্য সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেছেন, গম পর্যাপ্ত আমদানি হয়েছে। এর মজুত নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। তিনি আরও বলেন, বিশ্ববাজারে যে গমের মূল্য বেড়েছে, এর প্রভাব আগামী দুই মাস পর পড়বে।

কিন্তু দেখা যাচ্ছে, এর প্রভাব দ্রুত পড়ছে বাজারে। এ ধরনের তথ্য আমাদের কাছে আসছে। এজন্য আমি গোয়েন্দা সংস্থা ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্টদের কঠোরভাবে বাজার মনিটরিংয়ের নির্দেশ দিয়েছি।

বাজার পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বিআইডিএস-এর সাবেক ডিজি ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ এম কে মুজেরি যুগান্তরকে বলেন, ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধ বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য খাতে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে জ্বালানি তেল ও ভোগ্যপণ্যের বাজারে আঘাত আসছে। আমরা যুদ্ধরত দেশগুলো থেকে গম, ভোজ্যতেল, ভুট্টা আমদানি করছি। এসব পণ্যের দাম বেড়েছে। তবে এটিও ঠিক, বিশ্ববাজারের কারণে অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে যতটুকু বৃদ্ধির কথা, কতিপয় ব্যবসায়ী এর চেয়ে বেশি বৃদ্ধি করে থাকে। এজন্য সরকারকে পণ্যের মূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে রাখা উদ্যোগ নিতে হবে।

সম্প্রতি খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির বৈঠকে গম নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে বলা হয়, সরকার যে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, এর ৯৫ শতাংশ গম আবাদ করেছেন কৃষক। এছাড়া ২০২১ সালের মৌসুমে ১ লাখ মেট্রিক টন গম আমদানির লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ হাজার ২১২ টন বেশি সংগ্রহ হয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থবছরে (২০২১-২২) সরকার টু সরকার (জি টু জি) পদ্ধতিতে রাশিয়া থেকে ৩ লাখ মেট্রিক টন, ইউক্রেন থেকে ১ লাখ মেট্রিক টন এবং ভারত থেকে ৫০ হাজার মেট্রিক টন গম আমদানির চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এর মধ্যে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অর্থবছরের সাড়ে ৭ মাসে রাশিয়া, ইউক্রেন থেকে ৩ লাখ ৯০ হাজার মেট্রিক টন গম আমদানি সম্পন্ন হয়েছে। এর বাইরে ৫২ হাজার ৫শ মেট্রিক টনের গমবাহী জাহাজ বাংলাদেশ বন্দরে খালাসের অপেক্ষায় আছে। অর্থাৎ রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে সরকারিভাবে আমদানির পুরোটাই চলে আসছে। ফলে এ বছর যুদ্ধরত দেশ দুটি থেকে গম আমদানি নিয়ে কোনো ধরনের সরকারি পর্যায়ে শঙ্কা নেই।

এছাড়া ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বেসরকারিভাবে আমদানি করা হয়েছে ২১ লাখ ১৭ হাজার মেট্রিক টন। অবশ্য বেসরকারিভাবে বছরে প্রায় ৫৪ লাখ মেট্রিক টনের মতো আমদানি হয়।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, দেশে বার্ষিক গমের চাহিদা ৫৮ লাখ টন। প্রথম ছয় মাসে চাহিদা (জুলাই-ডিসেম্বর) ২৯ লাখ মেট্রিক টন। এই চাহিদা পূরণে সরকারি ও বেসরকারি মিলে মোট আমদানি হয়েছে প্রায় ২৫ লাখ মেট্রিক টন।

চলতি মাসে শেষ এবং এপ্রিলের শুরুতে কৃষকের আবাদের প্রায় ১২ লাখ মেট্রিক টন যোগ হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরের মৌসুমে (নভেম্বর-ডিসেম্বর) কৃষক ৩ লাখ ২০ হাজার হেক্টর জমিতে গম আবাদ সম্পন্ন করেছে। এ বছর সরকারিভাবে গম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১২ লাখ ২৬ হাজার মেট্রিক টন। ওই হিসাবে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার ৯৫ শতাংশই কৃষক আবাদ করেছে।

আমদানি, উৎপাদনের চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এই মুহূর্তে গমের সংকট নেই। কিন্তু যুদ্ধের দোহাই দিয়ে একশ্রেণির ব্যবসায়ী দাম বাড়াচ্ছে গমের। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পরপরই সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কায় দেশের ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে গত দশ দিনে প্রতি মনে (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) ১২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে গমের দাম। এর জেরে বেড়ে গেছে আটা-ময়দা ও সুজির দাম।

এখন এক কেজি খোলা আটা ৩৫ থেকে ৩৭ টাকা এবং আটার প্যাকেটের খুচরা মূল্য ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। একইভাবে খোলা ময়দার কেজি ৫০ থেকে ৫৫ টাকা এবং প্যাকেটজাত ময়দা ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি পাউরুটির প্যাকেটসহ কিছু ব্র্যান্ডেড বেকারির আউটলেট ও খুচরা দোকানে অন্তত ১০ টাকা বেড়েছে। রাস্তার পাশের চা-স্টলে বিক্রি হওয়া পাউরুটি ও বিস্কুটের দামও বেড়েছে। এতে কর্মজীবী মানুষের খাবারের পেছনে খরচও বেড়ে গেছে। এছাড়া আটা ও ময়দা দিয়ে তৈরি চানাচুর, বিস্কুট, বেকারি পণ্যসহ অন্যান্য পণ্যের দাম বেড়েছে।

সূত্র জানায়, রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের কথা বলে গম আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে ব্যবসায়ীরা। তাদের মত হচ্ছে, এ মুহূর্তে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে পণ্য আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে জাহাজ পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতিবছর এই দুটি দেশ থেকে আমাদের মোট চাহিদার ৩৫ লাখ মেট্রিক টন গম আমদানি করা হয়।

তবে চলমান যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনের প্রধান বন্দরগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে সরবরাহ ও শিপিং লিঙ্ক। যার ফলে স্থবির হয়ে পড়েছে শিপমেন্ট। এছাড়া রাশিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কারণে জাহাজ ভাড়াও বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশি খাদ্যশস্য আমদানিকারকরাও বিকল্প সোর্সিং দেশের সন্ধান করছে। বিশেষ করে বিকল্প হিসাবে কানাডা এবং আর্জেন্টিনা থেকে গম বুকিং করছেন অনেক আমদানিকারক।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

আরো খবর
© All rights reserved © 2019-2021 Bangaleer Diganta
Design and Developed by Classical IT