1. islammamun1286@gmail.com : admin :
  2. monjurtapon@gmail.com : Tapon Alokito : Monjur Elahi Tapon
  3. tofayelahammad149@gmail.com : tofayel :
বাংলাদেশের কাছে ৩৯ বছর আগে ৮ গোল খাওয়া মালদ্বীপ যেভাবে বদলে গেল | বাঙ্গালীর দিগন্ত
মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ০৯:০৬ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশের কাছে ৩৯ বছর আগে ৮ গোল খাওয়া মালদ্বীপ যেভাবে বদলে গেল

রিপোর্টার
  • সময় : শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৪
  • ৮২ Time View

হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের কফি শপে বসেই স্মৃতির ঝাঁপি খুলে দিলেন মোহাম্মদ সুজাইন। মালদ্বীপ ফুটবল দলের এই কোচ খেলোয়াড়ি জীবনে মোহামেডানের বিপক্ষে এশিয়ান ক্লাব কাপের একটি ম্যাচ খেলেছিলেন ইরানের আহওয়াজে, সেটি ১৯৮৯ সালের কথা। সুজাইনের দল ভিক্টরি এফসি বাংলাদেশের সে সময়ের লিগ বিজয়ীদের কাছে উড়ে গিয়েছিল ৭-২ গোলে!

সুজাইন সে ম্যাচের পর ছবি তুলেছিলেন কায়সার হামিদ আর রুম্মান বিন ওয়ালি সাব্বিরের সঙ্গে, ‘মোহামেডানের কায়সার হামিদ, সাব্বিররা তখন আমাদের কাছে বড় তারকা। সেই ম্যাচের পর তাদের সঙ্গে ছবি তুলেছিলাম। তবে এখন সেটি দূর অতীতের গল্প।’

সুজাইন এই একটি বাক্যেই বুঝিয়ে দিতে চাইলেন, ৩৫ বছর আগের মালদ্বীপের ফুটবল আর এখনকার মালদ্বীপের ফুটবল এক নয়। অথচ ১৯৮৫ সালের সাফ গেমসে মালদ্বীপকে ৮-০ গোলে হারানো বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য সুমধুর স্মৃতি হয়েই আছে। সুজাইন সেটি জানেনও।

গোল মিসের মহড়ায় মালদ্বীপের বিপক্ষে হার বাংলাদেশের
কিন্তু আবারও বললেন, ‘সেটি ৩৯ বছর আগের ইতিহাস। আমরা দেশ হিসেবে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচই খেলেছি ১৯৭৯ সালে। সে হিসেবে আমাদের ফুটবলের ইতিহাস ৪৫ বছরের। ১৯৮৫ সালের সাফ গেমসে মালদ্বীপ বাংলাদেশের তুলনায় শিশু দেশই ছিল ফুটবলে। কিন্তু সেই চিত্রটা বদলে গেছে এখন। বাংলাদেশের কাছে এখন ম্যাচ হারলে মালদ্বীপে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়।’
সময় কারও এক থাকে না। মালদ্বীপ যেমন সেটির প্রমাণ দিয়েছে, তেমনি বাংলাদেশেরও তা বোঝা হয়ে গেছে অনেক আগেই। ১৯৮৫ সালের পরও মালদ্বীপের ক্লাবগুলোর বিপক্ষে বাংলাদেশের যেকোনো ক্লাবের আধিপত্য ছিল চোখে পড়ার মতো। ১৯৯০ সালে এশিয়ান ক্লাব কাপ বাছাইয়ে ঢাকায় মোহামেডান মালদ্বীপের নিউ রেডিয়েন্ট ক্লাবকে হারিয়েছিল ৫-০ গোলে। তিন বছর পর মালদ্বীপের ক্লাব ভ্যালেন্সিয়া মোহামেডানের কাছেই হেরেছিল ৮-০ গোলে। এর আগে আবাহনী একবার এশিয়ান ক্লাব কাপেই ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে জিতেছিল ৭-১ গোলে। সেই মালদ্বীপের ক্লাবগুলোই এখন বাংলাদেশের ক্লাবগুলোর কঠিন প্রতিপক্ষ।

মালদ্বীপের সঙ্গে পেরে ওঠেনি বাংলাদেশ
মালদ্বীপের সঙ্গে পেরে ওঠেনি বাংলাদেশপ্রথম আলো
ঠিক কখন বদলের পথে হাঁটল মালদ্বীপের ফুটবল? ১৯৯১ সালের কলম্বো সাফ গেমসে হঠাৎ করেই রুপা জিতে যায় মালদ্বীপ। ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে ১-০ গোলে হেরেছিল তারা। সেই সময় থেকেই নাকি মালদ্বীপ ফুটবলের বদলে যাওয়ার শুরু, ‘সেবার সাফ গেমসে রুপা জিতেছিলাম আমরা। সরকার তখনই বুঝতে পারে, ফুটবল উন্নয়ন আমাদের দেশে সম্ভব। ওই সময় আমাদের লিগটাকে জমজমাট করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। মাঠ তৈরির কাজ শুরু হয়। স্কুলে স্কুলে ফুটবল ছড়িয়ে দেওয়া হয়।’

মালদ্বীপের ভূগোল সম্পর্কে জানলে বোঝা যাবে যে কাজটা মোটেও সহজ ছিল না। সবচেয়ে বড় কথা ভারত মহাসাগরের বুকে ২০০ ছোট ছোট দ্বীপের সম্মিলিত রূপ মালদ্বীপ। ১৯৬টি দ্বীপে জনবসতি আছে। সব মিলিয়ে ২৯৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই দ্বীপরাষ্ট্রের জনসংখ্যা মাত্র ৫ লাখ ২১ হাজার। ঢাকার একটি এলাকাতেই তো এর চেয়ে অনেক বেশি মানুষের বাস। এত কম জনসংখ্যার দেশেই বেরিয়ে এসেছে আলী আশফাক, মোহাম্মদ আরিফ, আলী ফাসির, হামজা মোহাম্মদদের মতো প্রতিভা।

বাংলাদেশ–মালদ্বীপ একপেশে লড়াই থেকে দ্বৈরথ হয়ে ওঠার গল্প
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের পর তার ফল পেতে সময় লেগেছে। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে যে পদক্ষেপগুলো নেওয়ার শুরু, সেটির ফল ধাপে ধাপে পেয়েছে তারা। এক সময় যে দেশ প্রতিপক্ষের গোল-উৎসবের লক্ষ্যবস্তু ছিল, তারাই আন্তর্জাতিক ফুটবলে লড়াই করা শুরু করল। তবে ১৯৯৮ সালে আবারও বড় ধাক্কা খায় মালদ্বীপের ফুটবল। সেবার বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ইরানের কাছে ১৭-০ গোলে হেরেছিল তারা। এই ইরান ১৯৯৮ সালে ফ্রান্স বিশ্বকাপে এশিয়ার প্রতিনিধিত্ব করেছিল।

নয়নভিরাম এমন মাঠে খেলে তৈরি হচ্ছে মালদ্বীপ
নয়নভিরাম এমন মাঠে খেলে তৈরি হচ্ছে মালদ্বীপসংগৃহীত
সুজাইন বললেন, ‘ইরানের বিপক্ষে সেই হারটি আমাদের জন্য ধাক্কা হয়ে এসেছিল। ফুটবল উন্নয়নের পরিকল্পনায় কোথাও কোনো গলদ আছে কিনা, সেই সন্দেহ তৈরি হয়। তবে আমি বলব, ইরানের কাছে ১৭ গোল খাওয়াটা আমাদের জন্য শাপে বরই হয়েছিল। পরিকল্পনাগুলো আরও সুন্দর করে সাজানো হয়। সরকারিভাবে আরও বিনিয়োগ আসতে থাকে। দ্বীপে দ্বীপে নতুন মাঠ তৈরি হয়। সে সময় রোমানিয়া থেকে ফেডারেশনের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর হিসেবে আসেন ভিক্টর নামে একজন কোচ। তিনি পরবর্তী সময়ে বড় ভূমিকা রাখেন।’

৩৯ বছর আগে মালদ্বীপের বিপক্ষে ৮–০ গোলে জিতেছিল বাংলাদেশ
৩৯ বছর আগে মালদ্বীপের বিপক্ষে ৮–০ গোলে জিতেছিল বাংলাদেশফেসবুক
২০০৬ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে মালদ্বীপ দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে ০-০ ড্র করে হইচই ফেলে দেয়। মালের সেই ম্যাচ দেশটির ফুটবলের এক বড় টার্নিং পয়েন্টই মনে করেন সুজাইন, ‘ইরানের বিপক্ষে বড় হারের পর নতুন করে যে পরিকল্পনা সাজানো হয়, সেটিরই ফল পাই আমরা ২০০৪ সালে এসে। দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে গোলশূন্য ড্রটা ছিল বিরাট ব্যাপার। সেই ম্যাচের পর স্পনসররা আসতে থাকে। দেশে ফুটবল নিয়ে তৈরি হয় নতুন জোয়ার। ২০০৮ সালে আমরা প্রথমবারের মতো সাফ চ্যাম্পিয়ন হই।’

যে দলকে এক সময় ৮ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ, তাদের বিপক্ষে খেলাটাই মাঝখানে টানা ১৫ বছর বাংলাদেশের জন্য ছিল বিরাট দুঃস্বপ্ন। মাত্র ৫ লাখ জনসংখ্যার এই দেশে কীভাবে বছরের পর বছর ধরে প্রতিভাবান ফুটবলারের খনি। সুজাইন শোনালেন মালদ্বীপ ফুটবলের দিন বদলের গল্পটা, ‘নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে সরকার এগিয়ে আসে, স্পনসররা এগিয়ে আসে। আমরা বিভিন্ন দ্বীপে মাঠ তৈরির উদ্যোগ নিই। কোচ তৈরির উদ্যোগ নিই। পরিকল্পনা করে এগোই। ফিফা ও এএফসির টাকায় মালদ্বীপে ১২০টি দ্বীপে কৃত্রিম মাঠ তৈরি করা হয়েছে। সেখানে বাচ্চারা ফুটবল খেলে, প্রতিভাবানদের সেখান থেকেই তুলে আনা হয়।’

বারবার শিখিয়েও কাজ হচ্ছে না, হতাশ বাংলাদেশ কোচ
সুজাইন মনে করেন কোচ তৈরি করার উদ্যোগই মূলত বদলে দিয়েছে মালদ্বীপের ফুটবলকে, ‘আমরা প্রথম থেকেই কোচ তৈরিতে মন দিয়েছিলাম। এএফসির বিভিন্ন লাইসেন্সিং প্রোগ্রামে আমাদের সাবেক ফুটবলারদের পাঠানো শুরু হয়। ২০০৫ সালের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি পেশাদার লাইসেন্সধারী কোচ মালদ্বীপই তৈরি করেছিল। ফুটবল উন্নয়নে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, আমি মনে করি প্রধানতম পদক্ষেপ।’

মালদ্বীপের মাঠে ফুটবল খেলছে ফুটবলাররা
মালদ্বীপের মাঠে ফুটবল খেলছে ফুটবলাররাসংগৃহীত
পরিকল্পনা করে এগিয়ে যাওয়ার সুফল পেয়ে চলেছে ছোট্ট এই দেশটি। সে কারণেই বাংলাদেশের কাছে ৮ গোল হজমের স্মৃতিকে দৃঢ় কণ্ঠে মালদ্বীপ কোচ বলে দেন, দূর অতীতের ইতিহাস। কথাটা বলার সময় তাঁর কণ্ঠে একরাশ তৃপ্তি। মালদ্বীপ ফুটবলের বদলের সাক্ষী হওয়ার তৃপ্তি।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

আরো খবর
© All rights reserved © 2019-2021 Bangaleer Diganta
Design and Developed by Classical IT