1. islammamun1286@gmail.com : admin :
  2. monjurtapon@gmail.com : Tapon Alokito : Monjur Elahi Tapon
  3. tofayelahammad149@gmail.com : tofayel :
বর্ণান্ধ - ফেরদৌসী সীমা | বাঙ্গালীর দিগন্ত
মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ১০:১৭ পূর্বাহ্ন

বর্ণান্ধ – ফেরদৌসী সীমা

রিপোর্টার
  • সময় : শুক্রবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২১
  • ৩৫৩ Time View

# বর্ণান্ধ

নেই বলতে কিছু ই নেই বল্লে ঠিক হবে না। অতুলের মতো বিত্তবান ঘরের শিক্ষিত সুন্দর এবং উপার্জনাক্ষম ছেলের জন্য বিদিশা একেবারে ফেলনা নয় সেটা অতুল বুঝলেও তার ফ্যামেলী, রক্ষনশীল মা বুঝবে না। বিদীশা গরিব বাবার মেয়ে এটা তার সীমাবদ্ধতা। সেই জন্য অতুলের জন্য বিদীশার ভালবাসার প্রকাশ অপ্রকাশ থাকে যদি ও মনে তার এক বিন্দু খামতি নেই তার প্রতি ভালোবাসার।নেই বলেই অবশেষে অতুল বিদীশাকে বিয়ে করে সোজা ঘরে তুলে। কিন্তু অতুলের মা
কিছুতেই বিদিশাকে বউ বলে মেনে নেয়না।এমন রাজপুত্রের মতো ছেলে
আমার তার এমন কালকুটে বিশ্রি বউ। কি করে ভুলিয়েছিস আমার ছেলেকে। গরীব ঘরের মেয়ে হলেও চোখ জুড়ানো রূপ থাকলে উৎরে যেতো আর রূপ না থাকলেও
যদি এককাড়ি টাকা থাকতো মনকে
বুঝানো যেতো কিছু ই তো নেই।তাহলে বিয়ে টা হলো কি করে। কি একটা তো অবশ্যই আছে আর সেটা হলো বিদিশার প্রতি অতুলের নিবিড় এবং নিঃসীম ভালোবাসা।বিদিশার কালো রূপের স্নিগ্ধতাই এবং তার সাথে স্বভাব সুলভ সরলতায় ভরা দুটো গভীর কালো চোখ। মায়া ভরা সেই চোখের চাহনি অতুলকে ডুবিয়েছে।অতুল ভুলেছে উচু নিচু ধনি গরিব সাদা-কালোর ভেদাভেদ এবং সেটা যেদিন প্রথম কলেজে ভর্তি হতে যাওয়া বিদিশাকে দেখে সেদিন থেকেই। সেই হতে অতুলের ধ্যনে জ্ঞানে বিদিশা ছাড়া
আর কেউ ছায়া ফেলতে পারেনি।পড়াশুনা শেষের সাথে সাথে ই মাল্টিন্যাশানাল কোম্পানিতে ভাল ক্যাটাগরিতে চাকুরী টা পেয়ে মনে করেছে আসলেই বিদিশা পয়মন্ত। তার ভাগ্যেই এত ভালো চাকুরী টা পেলো।আর দেরি না করে দুজোড়া হাত এক করার তোড়জোড়ে লেগে যায় কিন্তু বাধ সাধে অতুলের মা কিছু তেই ছোট ঘর হতে ছেলের জন্য একটা কালো মেয়েকে বউ করে
আনবে না। অতুলকে তা
বুঝাতে না পেরে ঠিক ই বিদিশাকে তুলেছে ঘরে কিন্তু মন থেকে কখনো মেনে নেয়নি। পদে পদেই তার প্রমান রেখেছে। ধরত্রীর মতো সহনশীল বিদিশা তা নিরবে সহ্য করে
যায়। অতুলের অমুল্য ভালোবাসা তার সাথে আছে। সংসারের শত কষ্ট শত গঞ্জনায় বিমর্ষ হলেও নিজের মধ্যেই সব চেপে যায়। ব্যস্ত অতুলকে প্রকাশ করে না। কিন্তু তার পান পাতার মতো কোমল মসৃন মুখটা দিনে দিনে শুকিয়ে সোঁটা হয়ে যাচ্ছে তা দৃষ্টি এড়াতে পারে না অতুলের। এর কোন সদুত্তোর সে বিদিশার কাছে না-পেয়ে মা’র কাছে জানতে চায়।মা’র এক কথা হা ঘরের
মেয়ে এত সুখ সইবে কেন যেখানের
টা সেখানে রেখো আসো দেখবে ঠিক
হয়ে যাবে।কথাটা মনপুত হলো, বিদিশাকে বাপের বাড়ি কদিনের জন্য পাঠানো হলো।সেখানে গিয়েই স্কুল টিচারের চাকুরী টা বিদিশা পেয়ে যায়।বিয়ের আগেই আবেদন করা ছিল। অতুলের ও অনুমতি ছিল। বাপের বাড়িতে থাকাতে সুবিধা হলো পরম নির্ভারে সে চাকরি টা করছে।ইতোমধ্যে তার কোল জুড়ে এসছে পুতুলের মতো ছেলে। কিন্তু শাশুড়ী মা নাতী দেখতেও আসে না বউ তুলে নিতে ও বলে না। চাকুরে বউ এর প্রতি নাখোশ।অথচ মুখে কিছু বলে না। কিন্তু সংসারের নিত্য দিনের নানা ঝামোলায় এখন পলে পলে বুঝতে পারে বউ কি জিনিস।না চাইতেই এখন আর সব কিছু হাতের কাছে পায়না।সারা জীবনের করা সংসারের দায়িত্ব থেকে কদিনে ই বিদিশা শাশুড়ীকে মুক্তি দিয়ে নিজের স্কন্ধে যে ভার তুলে নিয়েছিল এখন আবার তা শাশুড়ির ঘাড়ে পড়াতে নিজের ভুল বুঝতে পারে। ছেলে কে বলে বউ নিয়ে আসো, যার দায়িত্ব তাকে দাও সংসার তোমাদের আমি ভার বইতে পারবোনা। অতুল বলে আমার ছেলেকে তুমি দেখতে যাওনি। ওরা গরীব বলে নীরব অবজ্ঞায় দূরে
ঠেলে দিয়েছো পোয়াতি বউকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দায়িত্ব এড়িয়েছো।এখন কোন মুখে ফিরিয়ে আনার কথা বলছো। মা ছেলের মুখের দিকে নীরব দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে যাতে স্পষ্ট হয়ে থাকে তার ভুল স্বীকার। মুখে বলে তোমাকে কিছু করতে হবে না, আমি দেখছি। আমার বউ নাতি কে আনতে নিজেই যাব। কিন্তু না, যে কথা সে কাজ হয় না। আবার নীরবতা।অফিস ট্যুরে দূদিন
বাইরে ছিল অতুল সেখান থেকে ফিরে এসে তো চোখ চড়কগাছ। একি ভুত দেখছে না কি! এই তুমি কবে ফিরলে খোকা তার বাড়িতে এলো আমাকে কিছু ই জানালে না।বিদীশা নত মুখে বল্লো জানাতে মার নিষেধ ছিল তাই মায়ের কথার বাইরে যা-ই নি।চির দিন এমন লক্ষ্মী হয়ে থেকো। এতদিন পর অতুলের বুক থেকে বৈষম্যের সে বিরাট পাথর টা নেমে গেল তার নম্র আর লক্ষ্মী বউটার প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় বিগলিত হয়ে নিবিড় ভাবে কাছে নিয়ে বল্লো সত্যি তুমি স্বার্থক আমার মাকে জয় করেছো। এ যে আমার কত বড় ঐশ্বর্য তোমাকে বুঝাতে পারবো না।আজ মনে হচ্ছে আমার সংসারে কোন অপ্রাপ্যতা আর নেই। এ সময়ে খোকা কোলে মা ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলে হ্যাঁ রে অতুল কি ভুল ই না আমি করেছি সুখী হতে শুধু একটা ভালো মানুষ ই যথেষ্ট। তোর ছেলে দেখ, আমার নাতী কত দিন পর আমার চোখ খুলে দিল। আমি আজ আলো দেখতে পেলাম। কি ভুল ই না আমি এতদিন করেছি আমার বউ মা-কে চিনতে পারিনি পয়মন্ত বউ যে আমায় ষোলকলায় পুর্ন করেছে আমার সংসার। কি ধনি-গরীব, ছোট বড় সত্যিকার মানুষ ই হলো বড়। এত দিনে আমার বর্ণান্ধতা গুছলো।

সীমন্তিনী ঢাকা।
২৬/২/২০২১।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

আরো খবর
© All rights reserved © 2019-2021 Bangaleer Diganta
Design and Developed by Classical IT