1. islammamun1286@gmail.com : admin :
  2. monjurtapon@gmail.com : Tapon Alokito : Monjur Elahi Tapon
  3. tofayelahammad149@gmail.com : tofayel :
ছোট হয়ে গেছে পরোটা, কমেছে চায়ে চিনি | বাঙ্গালীর দিগন্ত
মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ০৯:২৮ পূর্বাহ্ন

ছোট হয়ে গেছে পরোটা, কমেছে চায়ে চিনি

রিপোর্টার
  • সময় : বুধবার, ২ মার্চ, ২০২২
  • ৩০৪ Time View
ছোট হয়ে গেছে পরোটা, কমেছে চায়ে চিনি

হঠাৎ করেই ছোট হয়ে গেছে হোটেল রেস্তোরার পরোটার আকার। সড়কের মোড় আর অলিগলির টং দোকানগুলোয় মিলছেনা চায়ের সঙ্গে প্রয়োজন মতো চিনি। কিছুটা বিলাসী হোটেল রেস্তোরাগুলো এরইমধ্যে বাড়িয়ে দিয়েছে খাদ্য দ্রব্যের দাম।

মূল্য বৃদ্ধি করলে কাস্টমার হারানোর আশংকায় থাকা ছোট হোটেলগুলো নিয়েছে ভিন্ন পদ্ধতি। গ্রাহককে দেয়া খাবারের পরিমাণ কমিয়ে চলছে টিকে থাকার চেষ্টা। ভোজ্য তেলসহ প্রায় সব ধরনের নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে এভাবেই এখন যে যার মতো করছে অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। কেবল হোটেল রেস্তোরা নয়, মধ্য ও নিম্নবিত্তের ঘরেও শুরু হয়েছে কৃচ্ছতা সাধন। পরিমাণে কম খেয়ে কিংবা তেল মসলার কম ব্যবহারে আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সমতা রক্ষার চেষ্টা করছেন সবাই।

কম আয়ের মানুষেরা সাধারণত দুটি পরোটা আর ১০ টাকার সবজি দিয়েই সেরে নেন সকালের নাস্তা। তেল ডালের মূল্য বৃদ্ধির জেরে সেই পরোটা সবজি-ও হয়ে উঠছে দুষ্প্রাপ্য। ছোট হোটেলগুলোতে ৫ টাকা করে বিক্রি হয় একেকটি পরোটা। এখন পর্যন্ত এই দাম অপরিবর্তিত থাকলেও ছোট হয়ে গেছে পরোটার আকার।

বুধবার সকালে নগরীর বটতলা বাজার সংলগ্ন একটি রেস্তোরায় গিয়ে চোখে পড়ে এই দৃশ্য। যে আকারের পরোটা এখন তৈরি হচ্ছে তাতে বর্তমানের দুটি মেলালেও হবে না আগের একটির সমান। পরোটার সাইজ ছোট হওয়াই শুধু নয়, কমেছে ১০ টাকার সবজির পরিমাণও। দিন দুয়েক আগেও ১০ টাকায় যে টুকু সবজি মিলত; এখন কমে হয়ে গেছে অর্ধেক।

অনেকটা রসিকতার সুরে নাস্তা করতে আসা এনজিও কর্মী পলাশ তালুকদার বলেন, যে সাইজের পরোটা খাচ্ছি তাতে এই টুকু সবজির বেশি লাগেও না।

হোটেলের মালিক রায়হান মুন্সি বলেন, এছাড়া তো কোনো উপায় নেই। জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বেড়েছে তাতে পরোটা ছোট আর সবজি কম দিয়েও তো টিকতে পারছি না। এমনকি ক্রেতার চাহিদামত চিনি পর্যন্ত দিতে পারছিনা চায়ে। ৪৮ টাকা কেজির চিনি কিনতে হচ্ছে ৭৮ টাকায়। আগে কাস্টমাররা এক কাপ চায়ে ৩/৪ চামচ পর্যন্ত চিনি নিত। এখন ২ চামচের বেশি দিতে পারি না।

এতো গেল নিম্ন আর মধ্যবিত্তের টং হোটেলে নাস্তার কাহিনী। খানিকটা ভালো মানের হোটেল রেস্তোরাগুলোতেও পড়েছে মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব। ফলপট্টি এলাকায় থাকা আকাশ হোটেলের মালিক নূরুল ইসলাম বলেন, ‘২৮০ টাকা কেজি দরের চা পাতা এখন ৪শ টাকা। ৩ হাজার ৬শ টাকার ৪৫ কেজি এলপি গ্যাস কিনতে হয় ৪ হাজার ৪শ টাকায়, ৫৭ টাকা কেজি দরের মিনিকেট চাল ৬৭ টাকা। অথচ আমরা হোটেল মালিকরা এখনো খাদ্যের মূল্য রাখছি প্রায় আড়াই বছর আগে নির্ধারণ হওয়া রেটে। কয়েকদিন আগেও যে সয়াবিন প্রতি লিটার কিনেছি ১৪৮ টাকায় এখন তা ২শ টাকাও মিলছে না। এভাবে চললে হোটেল ব্যবসা করে লাভ তো দূরের কথা, জমি বাড়ি বিক্রি করে পাওনা মেটাতে হবে।

গির্জা মহল্লা এলাকার একটি খাবার হোটেলের ম্যানেজার বলেন, মূল্য বৃদ্ধির কারণে গত কয়েকদিন ধরেই লোকসান হচ্ছে। দামও বাড়াতে পারছি না। খাবারের পরিমাণ কমিয়ে দিয়ে চলছে টিকে থাকার চেষ্টা। যেমন ধরুন আগে যেখানে ৫ পিস মাংস দিতাম সেখানে এখন দিচ্ছি ৪ পিস। অন্যান্য খাবারও পরিমাণে কম দেয়া হচ্ছে।

ফকিরবাড়ি সড়কের খাবার হোটেল রাঁধুনির মালিক নওশের আলী বিটু বলেন, লোকসান দিয়ে তো আর ব্যবসা করা যাবে না, ভাবছি খাবারের দাম বাড়িয়ে দেব। আগে দিনে ২০ হাজার টাকা বিক্রি হলেও ২ হাজার লাভ থাকতো, মঙ্গলবার ৩৫ হাজার টাকা বিক্রির পরও ১ হাজার ৭শ টাকা লোকসান হয়েছে।

হোটেল রেস্তোরা মালিক সমিতির সভাপতি সভাপতি বিশ্বজিত ঘোষ বলেন, নগরে ১শর বেশি সরকার অনুমোদিত হোটেল রেস্তোরা রয়েছে। পরিস্থিতি যা তাতে অনেক হোটেলই বন্ধ হওয়ার যোগাড়। ২-১ দিনের মধ্যেই বসবো আমরা। হয় দাম বাড়াতে হবে নয়তো পরিমাণে কম দিয়ে টিকে থাকতে হবে আমাদের।

হোটেল রেস্তোরার মতোই টিকে থাকার লড়াই শুরু হয়েছে ঘরে ঘরে। একদিকে যেমন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে টিসিবির খোলা বাজারে পণ্য বিক্রির ট্রাকের সামনে মানুষের লাইন তেমনি সম্মান বাঁচাতে সেখানে যেতে না পারা মধ্যবিত্তের ঘরে চলছে কম খেয়ে বাঁচার চেষ্টা।

নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে নার্সর চাকরি করা আয়শা আকতার (ছদ্মনাম) বলেন, বেতন পাই ১৫ হাজার। তারমধ্যে ৭ হাজার যায় বাসা ভাড়ায়। মোটা চালের কেজিও ৫৫ টাকা। স্বামী নেই। ২ ছেলে স্কুলে পড়ে। এখন আপনিই বলুন ৮ হাজার টাকা দিয়ে কি করবো ? এতদিন তাও টেনে টুনে চলেছি। এখন তো চলাই দায়। বাধ্য হয়ে এখন ছেলেদের নিয়ে দুই বেলা রুটি আর এক বেলা ভাত খাচ্ছি।

ওষুধ কোম্পানির চাকুরে জাহাঙ্গীর কবির বলেন, গত কয়েকদিন ধরে ২শ টাকা লিটার দরে সয়াবিন তেল কিনছি। ২৮ বালাম চালের দাম প্রতি কেজি ৬৪ টাকা। দাম বাড়েনি এমন কোন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য নেই। আগে ১ লিটার তেলে ৩ দিন রান্না হত। এখন স্ত্রীকে বলেছি যে কোনোভাবেই হোক ৫ দিন চালিয়ে নিতে।

রায়পাশা কড়াপুরের বাসিন্দা গাড়িচালক নূরুল ইসলাম বলেন, ১৫ হাজার টাকা বেতনে ৫ খানেওয়ালার সংসার কি করে চলছে তার খবর কেউ জানে না। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ডিউটি। টিসিবির ট্রাক থেকে যে কম দামে তেল ডাল চিনি কিনবো তারওতো উপায় নেই।

পুলিশ লাইন রোডের রাজমিস্ত্রি হারুন হাওলাদার বলেন, যে পরিমাণ চাল ডালে আগে মাস যেত তাই দিয়েই এখন আরও অন্তত ৮-১০ দিন বেশি চলার চেষ্টা করছি। এটা করতে গিয়ে প্রতিদিনের নিয়মিত খাবারে কমতি হচ্ছে।

বরিশাল নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব ডা. মিজানুর রহমান বলেন, কেবল নিম্ন আর মধ্যবিত্ত নয়, উচ্চবিত্তের বাজারেও কিন্তু এখন টান পড়েছে। পণ্য দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির এই আকাশ ছোঁয়া পরিস্থিতি এর আগে আর কখনো দেখেনি কেউ। এমনিতেই করোনার ছোবলে বিপর্যস্ত মানুষ। সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই নতুন করে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তাতে এখন টিকে থাকাই মুশকিল। আমি মনে করি সরকারের উচিত সব ধরনের নিত্য পণ্য টিসিবির মাধ্যমে খোলা বাজারে বিক্রি করা। একইসঙ্গে পণ্যের পরিমাণ এবং ট্রাকের সংখ্যাও বাড়াতে হবে। দিনভর লাইনে দাড়িয়ে থেকেও পণ্য না পেয়ে ফিরে যাওয়ার ঘটনা অহরহ ঘটছে। সবাই যাতে পণ্য পায় সেটা নিশ্চিত করা এখন সবচেয়ে জরুরি।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

আরো খবর
© All rights reserved © 2019-2021 Bangaleer Diganta
Design and Developed by Classical IT