# অনন্তের অন্ত- (গল্প)
অনন্তের সাথে পরিচয় বছর কয়েক আগে। কোন এক ঈদে খুব ই সুন্দর, মনোমুগ্ধকর একটা ঈদের শুভেচ্ছা কার্ড পায় সাবিতা তার অনন্তের ম্যসেঞ্জারে।তারপর প্রায় প্রতিদিনই সকাল বিকাল শুভেচ্ছা বার্তা আসতে থাকে। যেন বিরতিহীন ট্রেন কোন টার্গেট নিয়ে জমজমাজম চলছেই।
ঘর সংসার অফিস চাকরি সব নিয়ে সাবিতার টালমাটাল অবস্থা আসলে এতকিছু গভীর ভাবে দেখার সু্যোগ কোথায়। সাবিতার একটা ভালোই পরিচিতি আছে। অফিস প্রধান হিসাবে পরিচিতজন ও অনেক। শুভকামনা করতে ই পারে, করেও অনেকে।বিষয়টা এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ ছিল না।
একটা কথা আছে ‘সভ্যতার ফসল ফলেছে অবসরের অবকাশে’।সাবিতার বেলায় ঘটেছে অনেকটা সে রকম। অসুস্থতা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে একটা ছোটখাটো অপারেশন হয় এবং ছুটিতে যায়। অবসর! অফুরন্ত অবসর এখন। ল্যাপটপে সময় কাটানো ছাড়া করার মতো তেমন কিছু নেই। আর তখনই নোটিশে আসে অনন্তের ম্যাসেঞ্জার আইডি। এক বিস্ময়কর ব্যাপার এত সুন্দর করে এত আবেগ দিয়ে দিনের পর দিন কেউ কাউকে প্রপোজ করে যেতে পারে সাবিতা বিশ্বাস ই করতে পারে না। নিতান্ত কিউরিওসিটি থেকেই অডিও কল দিয়ে সাথে সাথে কেটে দেয়। আসলে ভয় পেয়ে যায়। কি বলবে একটা ধমক দিয়ে বকে দিবে! কিন্তু ফেবু আইডি খুলে যখন সকলকে ওপেন করে দিয়েছিল তখন ভাবেনি কেন এমন কিছু হতেই পারে।দোষ তো সাবিতারই। অপরদিক থেকে কল ব্যাক আসে। আসতেই থাকে, সাবিতা আর রিসিভ করে না। একসময় রিসিভ করে কিন্তু কথা বলে না। আসলে সাবিতা কিংকর্তব্য বিমূঢ়! কি বলবে ভেবে পায়না। শেষে এক সময়ে বল্লো সরি বুঝতে পারিনি। তারপর শুরু কথার মালা গাঁথুনি। তারা তখন অনন্ত পথের যাত্রী!এ পথের শেষ কোথায় জানা নেই। তবে চলছে জমজমাজম জম বিরতিহীন রেলট্রেন। অফিস খুললেই বুঝা যাবে সীমার গন্ডি ছাড়িয়ে কতটা যাওয়া যায়। আকাশ বাতাস সাগর নদী সবারইতো অনন্তের পথে চলা।চিরন্তন যাত্রা। অনন্ত ভার্চুয়াল জগতের বন্ধু। অন্তহীন সে জগৎ বড় বিচিত্রময়। নির্ভর করতে তাই ভরসা পায়না। তারপর ও টানা কয়েক বছর তারা বন্ধু! অন্তরঙ্গ বন্ধু,বিস্ময় কর সম্মোহন ক্ষমতা। এর থেকে বেরনো মুশকিল,সাবিতা তাই ফিরতে পারে না। অনন্ত থাকে সুইজারল্যান্ড।কত আর টেনে নিবে।সময় দেয়ার মত অফুরন্ত সময় কোথায় ।জেনে বুঝে একদিন ব্লক লিস্টে রেখে দেয় সাবিকে। অন্তত চলে যায় অনন্তে হারিয়ে। কস্ট হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবতা বড় কঠিন। পোশাকি চেয়ারে বসে সব সময় সবকিছু মানায় না।হাসপাতালের বেডতো আর অনন্ত কালের নয়।অসুস্থতার সুযোগে যে এসেছিল সুস্হ হয়ে যাওয়ার পর সে আবেদন ফুরিয়ে যেতে থাকে। বাস্তব বড় কঠিন!ভাঙ্গনটা আসে অনন্তের দিক থেকে।যে আবেগ আর উচ্ছ্বাস নিয়ে একদিন শুরু করে ছিল ক্রমে তাতে ভাটাপড়ে। মাঝের ক’টা দিন স্বপ্নে ভরা থাকে।এখনো কোন অলস মুহূর্তে বুকের ভেতরটা চিন চিন করে ওঠে। কি যেন হারানোর বেদনায় হাহাকার করে ওঠে মন।চাইলেও আর ফিরে পাওয়া যায়না। অনন্তরা অনন্ত কালের জন্য আসেনা, পরিযায়ী পাখি!
সীমন্তিনী- ঢাকা
১/৩/২১.
Leave a Reply